
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, ছায়াময়, মায়াভরা, গাছ-গছালী ঘেরা বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের গর্ব সুন্দরবনের কোলে দেশের সর্ব বৃহৎ উপজেলা শ্যামনগরের প্রানকেন্দ্রে প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বানিজ্যিক কেন্দ্র নওয়াবেঁকী বাজারের গা ঘেষে অবস্থিত “নওয়াবেঁকী বিড়ালাক্ষী কাদেরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসাটি”। অত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগনিত হয়েছে। মাদরাসাটি অত্র এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব মরহুম মাওলানা গোলাম বারী (রহঃ) এর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ০১/০১/১৯৬৮ ইং তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয়ে অদ্যাবধি সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। মরহুম মাওলানা গোলাম বারী (রহঃ) এর মহতী উদ্যোগের সাথে যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এ মহান কাজে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে মরহুম আলহাজ্জ তছিরুদ্দীন সানা, মরহুম মাষ্টার আজিজ বকস্ সানা,মরহুম হাফেজুদ্দীন সানা, মরহুম আবুল কাশেম সরদার, আলহাজ্জ ইছহাক আলী সরদার, জনাব গোলাম মহিউদ্দীন মোল্যা, মরহুম বাবর আলী মোল্যা, আলহাজ্জ ফজলুল হক মোড়ল, মরহুম আলহাজ্জ আতিয়ার রহমান মোড়ল, মরহুম আহম্মদ আলী মোড়ল প্রমুখ ছিলেন অন্যতম। এলাকা বাসীর সার্বিক সহযোগীতায় পূর্ণাঙ্গতা পায় গর্বের এ প্রতিষ্ঠান।
“বড়পীর আব্দুল কাদের জ্বিলানী (রহঃ)” এর নামে নওয়াবেঁকী বিড়ালাক্ষী কাদেরিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা নামে স্বমহিমায় যার পথ চলা, শিশু থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত চলতে থাকে তার পাঠদান কার্যক্রম। ১৯৭৩ সাল, পরিবর্তন হয় মাদ্রাসার নাম “নওয়াবেঁকী বিড়ালাক্ষী কাদেরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায়”। ০১/০১/১৯৭৭ সালে আরও একধাপ এগিয়ে যায় অত্র প্রতিষ্ঠান। পাওয়া যায় নবম শ্রেণী খোলার অনুমতি। ১৯৭৮ সালে অংশগ্রহন করে সর্বপ্রথম দাখিল পরীক্ষায়। ০১/০১/১৯৮৫ সাল, এমপিও ভুক্ত হয় দাখিল স্তর, এলাকাবাসী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপিঠ। ০১/০৭/১৯৮৩ সাল, খুশির বার্তা নিয়ে আসে এলাকার ধর্মপ্রান মানুষের জন্য, পাওয়া যায় আলিম শ্রেণী খোলার অনুমতি। ১৯৮৫ সালে প্রথম আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা, যা এমপিও ভুক্ত হয় ০১/০৯/১৯৮৫ সালে, ফলে সিনিয়র নাম করনের স্বার্থকতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ভাবে একের পর এক এগিয়ে চলে অত্র প্রতিষ্ঠান। ০১/০১/১৯৮৭ সালে দাখিল বিজ্ঞান বিভাগ খোলার অনুমতি পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি নবম শ্রেণীতে কম্পিঊটার শাখা খোলার অনুমতি পায় ০১/০১/২০০৩ সালে। অত্র মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয় ২০১০ সালে। ২০১২ সালে আরও একধাপ এগিয়ে যায় অত্র প্রতিষ্ঠান , পাওয়া যায় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা কেন্দ্রের অনুমতি। যার কোড নং-শ্যামনগর-২ (নওয়াবেঁকী) ৮২৭। বর্তমানে দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভৌত অবকাঠামোঃ
প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ একর ১০ শতক জমি রয়েছে। যার মধ্যে ১.০০ একর জমির উপর দাড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। অত্র প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৪ টি ভবন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে দু’টি মজবুত গেট সম্বলিত চতুর্দিকে পাকা প্রাচীর বিদ্যমান। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারী সকলের জন্য পৃথক পৃথক শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সর বরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। অত্র প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক/কর্মচারীসহ সকলের সুপেয় পানি পানের জন্য আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকুপ বিদ্যমান রয়েছে।
ছাত্র/ছাত্রীঃ
মাদ্রাসাটিতে ইবতেদায়ী শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালু আছে। বর্তমানে মাদ্রাসায় প্রায় ৭০০ (সাতশত) এর অধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত। ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, দাখিল পরীক্ষা ও আলিম পরীক্ষায় প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহন করে। ছাত্রাধীক্যের কারণে অত্র এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
শিক্ষক ও কর্মচারীঃ
বর্তমান প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষসহ ২৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। যার মধ্যে একজন সহকারী অধ্যাপক, পাঁচ জন প্রভাষক, ৬ জন সহকারী শিক্ষক, ৩ জন সহকারী মৌলভী, একজন দাখিল ক্বারী, ইবতেদায়ী স্তরে চার জন শিক্ষক, একজন নিম্নমান সহকারী ও তিন জন এম,এল,এস,এস কর্মরত আছেন। দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষক মণ্ডলী দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় সকল স্তরে প্রতিষ্ঠানটি সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।
পরিচালনা পরিষদঃ
প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত ১২ (বার) সদস্য বিশিষ্ট গভর্ণিং বডি দ্বারা পরিচালিত। গভর্ণিং বডির সদস্যগন প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কল্যানে নিবেদিত।
আসবাব পত্রঃ
মাদ্রাসাটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চেয়ার, বেঞ্চ, ব্লাক বোর্ড, আলমারী, শোকেজ, বাক্স, সেফটিক ড্রয়ের, শিক্ষা উপকরণসহ প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র বিদ্যমান। বিশেষতঃ কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে যথেষ্ঠ আসবাব পত্র সংরক্ষিত আছে।
লাইব্রেরীঃ
অত্র মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা গোলাম বারী (রহঃ) এর নামে প্রতিষ্ঠানটিতে পৃথক কক্ষে লাইব্রেরী বিদ্যমান আছে। লাইব্রেরীটি কাম্য সংখ্যক রেফারেন্স গ্রন্থ ও বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য এবং ধর্মীয় পুস্তকসহ পর্যাপ্ত বইয়ে সমৃদ্ধ। শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরী হতে বই সংগ্রহ পূর্বক তাদের জ্ঞানভাণ্ডারকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধশালী করে যাচ্ছে। একজন দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে লাইব্রেরীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়।
বিজ্ঞানাগারঃ
প্রতিষ্ঠানটিতে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক বিজ্ঞানাগার। রয়েছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন উপকরণ ও যন্ত্রপাতি, যা দ্বারা শিক্ষার্থীদের বাস্তব শিক্ষা প্রদান করা হয়।
মিলনায়তনঃ
মাদ্রাসাটিতে ২৫০০ বর্গফুট আয়তনের অডিটোরিয়াম রয়েছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীন অনুষ্ঠানাদি উদযাপিত হয়।
সহযোগী সংস্থাঃ
মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোর জন্য ছাত্র সংসদ, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেণ্ট, সাইন্স ক্লাবসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা গঠন করা হয়। বিভিন্ন দূর্যোগকালীন সময় এ সকল সংস্থার শিক্ষার্থীরা আর্তমানবতার সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
বার্ষিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল উদ্যাপনঃ
১৯৬৭ সালের ১৩ ফালগুন ২৫ ফেব্রুয়ারী অত্র মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা গোলাম বারী (রহঃ) এলাকাবাসীর সহযোগীতায় একটি তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের আয়োজন করেন। মাহফিলে বক্তা হিসেবে সে সময়ের বিজ্ঞ আলেম মরহুম মাওলানা বুরহান উদ্দিন (রহঃ), আলহাজ্জ মাওলানা এম, এ, রিয়াছাত আলী সাহেবসহ কয়েকজন বিজ্ঞ আলেমকে দাওয়াত করা হয়। যারা এলাকাবাসীর সামনে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে সকলের সহযোগীতায় আত্র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন মরহুম মাওলানা গোলাম বারী (রহঃ)। তখন হতে অদ্যাবধি ৪৭ বছর যাবত ১৩ ফালগুন মাদ্রাসা ময়দানে বার্ষিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল নিয়মিত উদ্যাপিত হয়ে আসছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপিতঃ
মাদ্রাসার পক্ষ থেকে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সমুহ যেমন- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস্, মহান স্বাধীনতা দিবস, মহান বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং জাতীয় স্বাক্ষরতা দিবসসহ বিভিন্ন দিবস উদ্যাপিত হয়।
ধর্মীয় উৎসব উদ্যাপনঃ
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব যেমনঃ ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সঃ), পবিত্র আশুরা, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, ইত্যাদী অনুষ্ঠান ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের সাথে উদ্যাপিত হয়।
ফলাফলঃ
প্রতি বছর ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, দাখিল পরীক্ষা এবং আলীম পরীক্ষার ফলাফল গুনগত ও সংখ্যাগত উভয়দিক দিয়ে সন্তোষজনক। প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি প্রাপ্তি এবং জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসার স্বীকৃতিসহ বিভাগীয় পর্যায়েও ফলাফলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে।
খেলাধুলাঃ
richard mille replica
প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার জন্য মনোরম পরিবেশে প্রাচীর বেষ্টিত মাঠ রয়েছে, যেখানে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিনটনসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা সরকারী ও স্থানীয় বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।
চিত্তবিনোদনঃ
চিত্তবিনোদন শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই শিক্ষা সফর এবং বার্ষিক প্রীতিভোজের ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আনন্দ দানের ব্যবস্থা করা হয়।
সমাপণীঃ
পূর্ব দিগন্তে উদীয়মান সূর্যের মতো অত্র প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশ দেশান্তরে। ডিজিটাল যুগে আই,সি,টি পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা দান পদ্ধতি প্রতিষ্ঠানটিকে করে তুলেছে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। দক্ষিনাঞ্চলের ধর্মপরায়ণ মানুষের আশার স্থল “নওয়াবেঁকী বিড়ালাক্ষী কাদেরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা” টি জাতির পথপ্রদর্শনের আলোক বর্তিকা হয়ে টিকে থাকুক চিরকাল।